ঢাকা: দেশের আর্থিক খাতে বড় ধরনের ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির (ইউসিবি) ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রধান গোলাম ইয়াজদানি এবং আমারপে পেমেন্ট গেটওয়ের মালিক ইস্তিয়াক। অভিযোগ অনুসারে, আমারপে গেটওয়ের আড়ালে এ দুইজন মাসিক ভিত্তিতে কোটি কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন পরিচালনা করছেন। দেশি এবং বিদেশি কার্ডহোল্ডারদের ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্য ব্যবহার করে গোপনীয় উপায়ে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন করা হচ্ছে।
জালিয়াতির কার্যক্রম ও প্রযুক্তিগত দিক
জানা গেছে, গোলাম ইয়াজদানি এবং ইস্তিয়াকের এই চক্রটি মূলত পেমেন্ট গেটওয়ে প্ল্যাটফর্মের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে কাজ করে। আমারপে পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে গ্রাহকদের অনুমতি ছাড়াই তাদের কার্ডের তথ্য ব্যবহার করে মিথ্যা লেনদেন দেখানো হয়। এই মডেলে গ্রাহকদের কার্ড থেকে অর্থ কেটে নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা করা হয়, যা পরবর্তীতে আন্ডার টেবিল চুক্তির ভিত্তিতে ভাগাভাগি করা হয়।
এই জালিয়াতি কর্মকাণ্ডটি মূলত উচ্চপর্যায়ের প্রযুক্তিগত সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে গোলাম ইয়াজদানি নিজেই তার ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁকফোকরগুলোর সুযোগ নিয়ে সহযোগিতা করছেন। তিনি ইউসিবির ডিজিটাল ব্যাংকিং সেক্টরে তার ক্ষমতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমারপে গেটওয়ের মালিক ইস্তিয়াকের সাথে মিলে এই অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
অর্থ উত্তোলনের পদ্ধতি ও আন্ডার টেবিল কমিশন
গোলাম ইয়াজদানি ও ইস্তিয়াকের চুক্তি অনুযায়ী, ইস্তিয়াক তার পেমেন্ট গেটওয়ে আমারপে’র মাধ্যমে বিভিন্ন মারচেন্ট এবং গ্রাহকদের কার্ড তথ্য সংগ্রহ করেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে ভুয়া লেনদেন দেখানো হয় এবং প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে উভয়েই বিশাল অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেন। তাদের এই কার্যক্রমে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা সাধারণ লেনদেন হিসেবে মনে হলেও, তা আসলে প্রতারণামূলক লেনদেন। এই আন্ডার টেবিল কমিশনের চুক্তিতে অন্যান্য অংশীদার প্রতিষ্ঠানও বিভিন্নভাবে সুবিধাভোগী হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ ও জনমনে উদ্বেগ
এই জালিয়াতির বিষয়ে দেশব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দাবি জানানো হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এই অভিযোগের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এর ফলে সাধারণ গ্রাহক এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের আর্থিক খাত সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পেতে পারে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে, যাতে এই ঘটনার পেছনের সত্য উদঘাটন করা যায় এবং যারা এই প্রতারণার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
ভবিষ্যতে করণীয় ও গ্রাহকদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ
এই ঘটনায় বিশেষজ্ঞরা গ্রাহকদের প্রতি সতর্কতা জারি করেছেন এবং অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। পেমেন্ট গেটওয়ে এবং ক্রেডিট কার্ড লেনদেনের ক্ষেত্রে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ এবং নিয়মিতভাবে পেমেন্ট গেটওয়ে ও ব্যাংকিং সিস্টেমের নিরাপত্তা পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।
সুশীল সমাজ এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের জালিয়াতি দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই গ্রাহকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ আশা করছেন অনেকে।